Financial Inclusion Department

Site Map |

ঋণ সুবিধা গ্রহণ

             ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে বিভিন্ন ধরণের ঋণ সুবিধা গ্রহণ করা যায়। যেমন: ব্যবসার জন্য ঋণ, কৃষি ঋণ, গৃহ নির্মাণ ঋণ, শিক্ষা ঋণ, ভোক্তা ঋণ ইত্যাদি।

               যেহেতু ঋণের অর্থ সুদ/মুনাফাসহ পরিশোধ করতে হয়, সেহেতু ঋণ নেয়ার পূর্বে চলতি আয়/ভবিষ্যত আয় থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে কি না, তা বিবেচনা করে ঋণ করা উচিত। বেহিসেবি/লোক দেখানো খরচের জন্য ঋণ গ্রহণ করা কখনই উচিত নয়। যেমন- জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব/বিবাহ, গহনা কেনা, বিলাসদ্রব্য কেনা ইত্যাদি। যদি এসব উপলক্ষে টাকা খরচ করতেই হয়, তবে তা নিজের সাধ্যের মধ্যে অর্থাৎ নিজের আয় বা জমানো টাকা থেকেই করা উচিত। ভোগের জন্য ব্যয় কোনও আয় তৈরি করে না, ফলে এ খাতে গৃহীত ঋণ শোধ করা কষ্টকর। অন্যদিকে, ঋণ শোধ করার জন্য বারবার বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ গ্রহণ করা হলে সেক্ষেত্রেও ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

ঋণ গ্রহণ করার সময় এ কথা মাথায় রাখা দরকার যে, সুদ/মুনাফাসহ তা পরিশোধ করতে হবে।  সুতরাং, ঋণের অর্থ ভোগ্য পণ্য বা বিলাস দ্রব্যে খরচ করলে ঋণ পরিশোধ করার জন্য পুনরায় ঋণ নিতে হতে পারে, যা অত্যন্ত বিপদজনক। অপরদিকে, ঋণের অর্থ আয় বৃদ্ধিকারী কাজে ব্যয় করলে সে ঋণ পরিশোধ করা সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি কৃষি কাজের জন্য বছরে ৯%  সরল সুদে ২০,০০০ টাকার ঋণ নেন এবং তা দিয়ে উৎপন্ন ফসল বিক্রি করে ৮০,০০০ টাকা পান, তাহলে বছর শেষে ঋণের সুদ/মুনাফা সমেত আনুমানিক মোট (২০,০০০/-+ ১,৮০০/-) ২১,৮০০/- টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ আয় হিসেবে বেঁচে যাবে।  

আয় উৎসারী কর্মকান্ডের জন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া উত্তম। তবে প্রয়োজনে সন্তানের উচ্চশিক্ষা বা বাসগৃহ নির্মাণের জন্যও ঋণ নেয়া যায়। এ ধরণের ঋণ কে আমরা ভবিষ্যত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি।

ঋণ গ্রহণের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানঃ

সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণ করা নিরাপদ। এছাড়া, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হতেও ঋণ গ্রহণ করা নিরাপদ। কেননা এক্ষেত্রে সেবা পেতে হয়রানির শিকার হলে বা অতিরিক্ত ফি/চার্জ আদায় করা হলে, উক্ত ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট এর প্রতিকার চাওয়া যায়। 

ঋণের খরচঃ

ঋণ নেওয়া টাকার পরিমাণের উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ/মুনাফা ধার্য করা হয়। এটাই মূলতঃ ঋণের খরচ। তবে ঋণের সুদ বা মুনাফা ছাড়াও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেদে ক্ষেত্রবিশেষে আরও কিছু সার্ভিস চার্জ/ফি দিতে হয়। সাধারণত ব্যাংকগুলো বার্ষিক হারে সুদ নির্ধারণ করে থাকে। যেমন: ১২% বার্ষিক সুদ মানে বছরে ১০০ টাকায় ১২ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করতে হবে।

ঋণের জামানত/বন্ধক

অনেক সময় ঋণের জন্য জামানত/বন্ধক রাখতে হয়। ঋণের জন্য জামানত/বন্ধকের বিষয়টি নির্ভর করে মূলতঃ কী ধরনের ঋণ এবং কী উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে তার উপর। বড় অংকের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসেবে রাখতে হয়, যেমন: জমি, বাড়ি, ব্যবসায় নিয়োজিত যন্ত্রপাতি/সরঞ্জামাদি ইত্যাদি। কিছু কিছু  ক্ষেত্রে ব্যাংক জামানতবিহীন ঋণও প্রদান করে থাকে।

ঋণ খেলাপীঃ
            ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ খেলাপী হয়ে যেতে হয়। আর একবার ঋণ খেলাপী হলে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ গ্রহণের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন না। সুতরাং ঋণ গ্রহণের পূর্বে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করে ঋণ গ্রহণ করা উচিত।

 

 

সময়মত  ঋণ পরিশোধ জরুরীঃ

ব্যাংক ঋণদানের জন্য আমানতকারীদের টাকা ব্যবহার করে থাকে। যদি ঋণগ্রহীতা সময়মতো টাকা পরিশোধ না করে, তবে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং আমানতকারীদের টাকা সময়মত ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে। আবার, ব্যাংকের বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতাই যদি এমন করেন, তবে গ্রাহকের আমানত ব্যাংক থেকে ফেরত পাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। অন্যদিকে ব্যাংকের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করা হলে নতুন নতুন গ্রাহককে ঋণ বা আগাম প্রদান করা সম্ভব হবে। ব্যাংকের টাকা সময়মতো পরিশোধ করলেই ভবিষ্যতে ব্যাংক একই গ্রাহককে প্রয়োজনে পুনরায় বর্ধিত ঋণ সুবিধা প্রদান করতে পারবে। এছাড়া, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করলে একজন গ্রাহক ঋণ খেলাপী হয়ে যেতে পারেন। এর ফলে ভবিষ্যতে তিনি উক্ত/অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ পাবারও যোগ্যতা হারাবেন।

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করা না হলে, সুদসহ ঋণের টাকা ফেরত পাবার লক্ষ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের দেয়া জামানত বাজেয়াপ্ত করাসহ প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়ায় বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলে ব্যাংকের পাওনা আদায় করে নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের মূল্যবান সম্পত্তি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজারদরের চেয়ে কমমূল্যেও  নিলাম করে তাদের পাওনা নিষ্পত্তি করতে পারে। সুতরাং গ্রাহক তার সম্পত্তির ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।