নারী উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রদত্ত সংজ্ঞা মতে, যদি কোন নারী ব্যক্তি মালিকানাধীন বা প্রোপ্রাইটরি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী বা প্রোপ্রাইটর হন কিংবা ‘অংশীধারী প্রতিষ্ঠান’ বা রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস’ এ নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানীর পরিচালক বা শেয়ার হোল্ডারগণের মধ্যে অন্যূন ৫১% (শতকরা একান্ন ভাগ) অংশের মালিক হন তাহলে তিনি বা তাঁরা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিগণিত হবেন এবং ঐ উদ্যোগটি নারী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ঋণ প্রাপ্তির জন্য একজন নারী উদ্যোক্তার করণীয়
- কত টাকা ঋণ নিতে ইচ্ছুক তা ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে বলা;
- ব্যবসায়ের গতি প্রকৃতি বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়;
- ব্যাংক/আার্থিক প্রতিষ্ঠানের সিএমএসএমই ঋণ আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ;
- আবেদনপত্রের সাথে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাচিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল;
- উদ্যোগের/প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত আয়-ব্যয়ের ও ঋণ চাহিদার সমন্বয়ে বাস্তবভিত্তিক ব্যবসা পরিকল্পনা দাখিল;
- ব্যবসায়ের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব লিপিবদ্ধকরণ এবং পূর্বের ব্যাংক ঋণ (যদি থাকে) নিয়মিত পরিশোধ করা;
**ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান গ্রাহক হলে ব্যাংকার-কাস্টমার রিলেশন এর ভিত্তিতে গ্রাহকের ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হয়;
নারী উদ্যোক্তাদের সিএমএসএমই ঋণের সুদের হার
স্মল এন্টারপ্রাইজ খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৭% হার সুদ/মুনাফায় ঋণ দেয়া হয়।
নারী উদ্যোক্তাদের সিএমএসএমই ঋণ পেতে যে সকল জামানত প্রয়োজন হয়
বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় নারী উদ্যোক্তাগণ শুধু তৃতীয় পক্ষের ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে সর্বোচ্চ ২৫.০০ (পচিঁশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেতে পারেন।
নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সেবা/পরামর্শ প্রদানের জন্য ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ব্যবস্থা
- বাংলাদেশ ব্যাংক এর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রধান কার্যালয়/আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থাপিত নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট ও নির্বাচিত শাখার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তার জন্য বিশেষ পরামর্শ ও সেবা কেন্দ্র স্থাপনপূর্বক তাদের সাথে সেবা বান্ধব আচরণ নিশ্চিত করে থাকে ।
- এছাড়াও, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসূহের প্রত্যেক শাখায় স্থাপিত Women Entrepreneur Dedicated Desk নারী উদ্যোক্তাগণকে যাবতীয় পরামর্শ ও ব্যবসা বিষয়ক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রাসম্ ডিপার্টমেন্ট এ নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সহায়ক সেবা প্রদান, অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তিকরণ, প্রমোশনাল কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি মনিটরিং, মূল্যায়ন ও তদারকির লক্ষ্যে পৃথক নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সুবিধা/ঋণের ব্যবস্থা
সিএমএসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য অনুসরণীয় নীতিমালা জারি করেছে। এর মধ্যে-
- পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের সমুদয় অর্থের ন্যূনতম ১৫% নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে;
- পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সর্বোচ্চ ৭% সুদ হার প্রযোজ্য;
- পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের বিপরীতে ঋণ গ্রহীতা নারী হলে বা ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নারী উদ্যোক্তা হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জামানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ২৫.০০ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা প্রদান করতে পারে;
- অর্থায়নকারী ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রধান কার্যালয়/আঞ্চলিক কার্যালয়ে স্থাপিত নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট ও নির্বাচিত শাখার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তার জন্য বিশেষ পরামর্শ ও সেবা কেন্দ্র স্থাপনপূর্বক তাদের সাথে সেবা বান্ধব আচরণ নিশ্চিত করে থাকে;
- ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল শাখায় স্থাপিত Women Entrepreneur Dedicated Desk নারী উদ্যোক্তাগণকে যাবতীয় পরামর্শ ও ব্যবসা সহায়ক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে;
- নারী উদ্যোক্তাদেরকে অধিক হারে উৎসাহিত করতে উদ্যোক্তার চলতি মূলধনের চাহিদা পূরণে চলমান ঋণ মঞ্জুর অব্যাহত রাখার এবং ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ০১ বছর মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ০৩ মাস এবং মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ০৩/০৬ মাস পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড প্রদান করা হয়;
- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রতিটি শাখার আওতাধীন এলাকায় ন্যূনতম ০৩ (তিন) জন আগ্রহী নারী উদ্যোক্তা (যারা ইতোপূর্বে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোন প্রকার ঋণ গ্রহণ করেননি) খুঁজে বের করে তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি (Capacity Building)-র প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্যে প্রতি বছর ন্যূনতম ০১ জনকে কুটির, মাইক্রো অথবা ক্ষুদ্র খাতে ঋণ প্রদান করে থাকেন।